যাত্রা-৪

তাহিরা তাসরিন মিথিলা 


Tahira Tasrin Mithila



মীরা:আপমি কি জানেন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে?

আবির:হ্যা,জানি।

মীরা:আমরা অনেক ক্লোজ ছিলাম।জানেন?

আবির:হুম, জানি।

মীরা:আমাদের ৭বছরের সম্পর্ক।

আবির:জানি।

মীরা:আমার বাবার কোনো সম্পত্তি নেই।আমরা একদমই নিম্ম মধ্যবিত্ত।

আবির:আমার বাবারও নেই।

মীরা:কিন্তু আপনার তো আছে।

আবির:হ্যা,তা আছে।

মীরা:তাহলে? আপনি তো আমার থেকে অনেক বড়লোক।

আবির:ধন-সম্পদের দিক থেকে হলে, আমি আসলেই অনেক বড়লোক। 

মীরা:কিন্তু আমি তো গরিব।আমার ক'টা কাগজের সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই নেই।

আবির:জানি।

মীরা:এমনকি আমার কোনো রূপ ও নেই।

আবির:(.........)

মীরা:তারপরও আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান?আর তাছাড়া.....

আবির:তাছাড়া কি?

মীরা:সমাজ আমাকে মেনে নিবে না কখনও।

আবির:আপনাকে সমাজ বিয়ে করছে না।আমি করছি।আর আমি আপনার মাঝে কোনে ত্রুটি দেখছি না।

মীরা:আপনি যদি আমাকে দয়া দেখাতে চান,তাহলে i am sorry.আমার আপনার দয়া লাগবে না।

আবির:আমি আপনাকে ভালোবাসি।

মীরা:(..........)

আবির :আর ভালোবাসায় কখনও দয়া থাকতে পারে না আর যাই থাকুক।ভালেবাসায় থাকে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা  আর সম্মান।

মীরা:(.........)

আবির:আমি আপনাকে ভালোবাসি,বিশ্বাস করি,শ্রদ্ধা করি,সম্মান ও করি।আর আপনাকে সম্মান করি বলেই আপনাকে কখনও দয়া দেখাতে পারব না আমি।আপনার সম্মামহানী হয় এমন কোনে কাজ আমি কখনই করতে পারব না।

মীরা :এসব সিনেম্যাটিক কথা ক'দিনের মাঝেই উড়ে যাবে,যখন সমাজের সবাই আমাকে নিয়ে নোংরা কথা বলবে,আপনার পরিবার আমাকে মেনে নিবে না।

আবির:আমি আপনাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি,বিয়ে আমি করছি, আপনাকে। সমাজকে ও না,আমার পরিবারকেও ও না।

মীরা:কিন্তু......

আবির:আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি।আপনাকে কিছু জানোয়ার সম্মানহানি করেছে।আপনাকে ধর্ষণ করেছে,আপনার মুখে এসিডও দিয়েছে। কেন?কারণ আপনি অনেক সুন্দরী তাই?আমি বুঝিনা,সুন্দরী হলেই লাভ কি আর অসুন্দরী হলেই বা লাভ কি?

মীরা:যদি আমি আর একটু কম সুন্দরী হতাম,তাহলে হয়তো আমার সাথে এসব হতো না।

আবির:হয়তো!সেই তো হয়তো থেকেই যায়,মীরা।যারা অসুন্দর তাদেরকে যখন তাদের চেহারার জন্য অপমান করা হয়,তারা ভাবে যদি আমি একটু সুন্দর হতাম তাহলে আমাকে হয়তো কেউ অপমান করতো না।তাই না?

মীরা:(..........)

আবির:যাই হোক,আমি এসব নিয়ে কথা বাড়াতে চাচ্ছি না।আমি সোজা কথায় বলতে চাচ্ছি, আমি আপনাকে ভালোবাসি এবং আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।বুঝেছেন?

মীরা:দেখুন,আপনি আমার কেস টা এতো ভালোভাবে লড়েছেন,জিতেওছেন।আমি আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।কিন্তু.....

আবির:তাহলে সেই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই আপনি রাজি হয়ে যান।আমি হয়তো পুরো সমাজকে বদলাতে পারব না।কিন্তু একটা মেয়েকে আর তার যন্ত্রণাময় জীবনটাকে হয়তো একটু হলেও আমি মুক্তি দিতে পারবো।তার যন্ত্রণাকে একটু হলেও লাঘব করতে পারব।(......)

মীরা:(...........)

আবির:এখন শুধু আপনার অনুমতি চাই।

মীরা:আমি..... আসলে....

আবির:আপনার হাসি ই বলে দিচ্ছে যে আপনি রাজি।

মীরা:আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো.....

আবির:সেটা পরেও দিতে পারবেন,কিন্তু একটা কথা বলুন তো..আপনার কি আসলেই বয়ফ্রেন্ড আছে?

মীরা:না,আমি আপনাকে ভাগানোর জন্য সেটা বলেছি।আমও চাই না আমার মতো অভাগীর জন্য..... 

আবির:হয়েছে,হয়েছে।চলুন তো।

মীরা:কোথায়?

আবির :আমি যেখানে নিয়ে যাব সেখানে।

মীরা:আচ্ছা

আবির:আপনার হাতটা দিন তো।

মীরা:হাত..?

আবির:এই যে ধরলাম হাত।মৃত্যু ছাড়া আর কেউ আমার কাছ থেকে এই হাত কেড়ে নিতে পারবে না।কথা দিলাম।


এভাবেই ধর্ষিতা মীরার নতুন জীবনের যাত্রা শুরু হয়।এসিডে দগ্ধ ঠোটের হাসিরও যে এক অদ্ভুত মায়া আছে তা মীরার হাসি না দেখলে বুঝা যাবে না।পৃথিবীতে কত রকমের জীবের বাস।কেউ চারপায়ের পশুর চেয়েও অদম,কেউ বা দেবদূত। ]

যাত্রা-২।তাহিরা তাসরিন মিথিলা। বাংলা গল্প

যাত্রা -৩।তাহিরা তাসরিন মিথিলা। বাংলা গল্প

যাত্রা-১।তাহিরা তাসরিন মিথিলা। বাংলা গল্প

পরিচয়।তাহিরা তাসরিন মিথিলা। বাংলা কবিতা