জলছায়া-পর্ব -৪ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo





জলছায়া-পর্ব -৪ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo






জলছায়া
ফায়াজ হাসান মাহি



(৪)

আম্মা রাগে ফোস ফোস করে বলে, গু বলবে।

তোর বাবা কি কোন মানুষের চিকিৎসা করে। তার

কাছে গতকাল দুজন রোগী আসছে। রোগী

কারা জানিস? একটা মুরগী আর একটা রামছাগল। সে

মুরগীকে সাদা হোমিও বড়ি গুড়া করে খাইয়ে

দিয়েছে। এরপর থেকে মুরগী আর ডিম পাড়েনা।

সকালবেলা মুরগীওয়ালা বাড়ির দরজা ধাক্কায় মাথায় তুলে

তোর বাবাকে মুরগী দেখাইতে নিয়ে গেছে।

দুইদিন পর দেখবি গরু ছাগল, সাপ ভালুক নিয়ে

লোকজন বাসায় আসবে। তোকে সবাই ডাকবে

মুরগী ডাক্তারের ছেলে। কত সম্মান পাবি তাই না?

আমি ফোনে হাসতে হাসতে মারা যাই। আল্লাহ আমার

বাবা মা কে কেন এত কিউট করে বানাইছে জানিনা। আমি

খুব ভাগ্যবান,অতি অতি ভাগ্যবান। আম্মাকে বললাম,

সকালে নাস্তা করে মেটফরমিন খেয়েছো?

আম্মা শান্ত হয়ে বলে, ওষুধ খেতে ভালো

লাগেনারে বাবু। তুই চলে আয় কুমিল্লায়। একসাথে

থাকবো, তাও ভালো।

সন্ধ্যা থেকে মেসের বারান্দায় বসে আছি। হাতে

এক কাপ চা। চা আজকে আদা দিয়ে বানিয়েছি। খেতে

ভালো হয়নি, আজকাল যাই মুখে দেই বিস্বাদ লাগে।

বন্ধু ছোটন সকালে ফোন করে বলে, দোস্ত

২০০ টাকা ধার দে।

আমি পিচিক করে বেসিনে থুথু ফেলে ওকে

বললাম, দোস্ত আমাকে ৫০ টাকা ধার দিয়ে যা। তিনদিন

ধরে বনরুটি আর চা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। একদিন চাকরী

পেয়ে টাকা দ্বিগুণে শোধ দিবো।

ছোটন ফোন কেটে দিলো দুটো অশ্লীল

গালি দিয়ে। ছোটন আমার স্কুল জীবনের বন্ধু।

বর্তমানে সে একটি গরুর খামারে চাকরী করে।

ক্যাশিয়ার টাইপ একটা কাজ। ওর একটু চোরা অভ্যাস

আছে তাই বেশিদিন ওকে কেউ চাকরীতে

রাখেনা। শেষ চাকরীতে তাঁকে রীতিমত গণপিটুনি

দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছিলো। আমার মনে

হয় তার বর্তমান চাকরীটাও এখন আর নেই। ওর বাবা

একজন স্কুল শিক্ষক। প্রায়ই তাঁকে স্কুলের

হেডস্যার ক্লাসে এসে মারতে মারতে বলতো,

আলিমের ঘরে জালিম হইছে। ওর বাবা রিটায়ার্ড হওয়ার

পর ২ লাখ টাকা পেয়েছিলো। কোন একভাবে

ছোটন সেই টাকাটা চুরি করে পালিয়ে যায়। তিনমাস পর

যখন বাসায় ফিরে তখন তার বাবার জানাযা পড়ানো হচ্ছে।

ওর মা ছোটকালে পুলিশের এক হাবিলদারের সাথে

ভেগে গিয়েছিলো। ভাই বোন নেই। সে খুব

যত্ন করে বাবার কবরে হাত তুলে দোয়া

পড়িয়েছিলো। রাতে আমার বাসায় ভাত খেয়ে

সিগারেট ফুঁকে বলছিলো, একদিন অনেক বড় মানুষ

হবো বুঝলি। ফুলিরে বিয়ে করে গাড়িতে ঘুরাবো।

তোরে ব্যাকসিটে চড়ায় আইসক্রিম খাওয়াবো।

আমি ওকে বললাম, দোস্ত তুই আর পড়াশোনা

করবিনা?

সে খ্যাক খ্যাক করে হেসে বলে, ধুর বাল।

পড়াশোনা করে কে কবে বড় হইছে। আমি ব্যবসা

করমু। টাকার ব্যবসা। নিজে টাকা ছাপায় মানুষরে বান্দি বানায়

খাটামু।

আমি হাসিমুখে বলি, ফুলি কে?

ও আমার দিকে তাকিয়ে রহস্য করে বলে, আছে

এক মাইয়া। ঢাকায় পরিচয় হইছে। ৫০ টাকা লাগে ওরে

খাইতে। কিন্তু আমার থিকা টাকা নেয়না। ভালো মাইয়া

দোস্ত। মন অনেক ভালো। মেয়েটা অসুখ

করছে। আমি ওরে এখন আমার থাকার জায়গায় আইনা

রাখছি। বহুত ভালো মেয়ে। আমারে ভাজি ডাল রাইন্ধ্যা

খাওয়ায়।

আমি তখন কলেজে পড়ি। এসএসসি পাশ ১৮ বছরের

ছোটনের জীবনটা তখন আমার অনেক

আকর্ষণীয় মনে হয়। সেইরাতে ও আমার বাসায় চুরি

করে পালিয়ে যায়। আহারে ছেলেটা আমার কাছে

চাইলেই আমি আমার জমানো টাকা দিয়ে দিতাম। শুধু শুধু

আব্বার ঘড়ি আর শখের মোবাইলটা নিয়ে গেলো।

ছোটন অবশ্য চুরি করে লজ্জা পায়না। অনেকদিন পর

ঢাকা শহরে আবার হঠাৎ করে একদিন আমাকে দেখা

হলে বলে, দোস্ত সেদিন মিসটেক হয়ে

গেছে। আঙ্কেলরে আমি নিজে হাতে একটা

আপেলফোন কিনে দিয়ে আসবো। একটু সবুর

কর। ব্যবসা করতেছি।



(চলবে..golpo



জলছায়া-পর্ব -১ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo

জলছায়া-পর্ব -২ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo

জলছায়া-পর্ব -৩ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo 


বাংলা গল্প।

Bangla golpo




0 Comments