জলছায়া
ফায়াজ হাসান মাহি
আমি হাসিমুখে বললাম, তোমার জয়েন কবে পিডিবি
তে?আসিফ চুলে হাত দিয়ে আচড়িয়ে বলে, এইতো ভাই
খুব তাড়াতাড়ি। আপনেও ট্রাই করেন ভাই। হয়ে যাবে
পরের বছর ইনশাল্লাহ।আমি মাথা নাড়ি। তাঁকে আশ্বস্ত করি পরের বছর অবশ্যই
আমি চেষ্টা করবো ভালোভাবে পরীক্ষা দেবার।
৫১ হাজার টাকা বেতনের চাকরী তো যেনতেন
ব্যাপার না!
বিদায় নেবার আগে সে জানতে চাইলো, ভাই আপনি
জি আর ই দিছিলেন না জানুয়ারীতে। আপনে মিয়া
বাহিরেও মনে হয় এপ্লাই করেন নাই ঠিক মত?
আমি হতাশ হয়ে বলি, করছিলাম। ঠিকমত কোথাও ডাকে
নাই। দেখি কি করা যায়।
আমার নতুন পাওয়া এডমিশিনের কথা আসিফকে বললাম না।
শুধু শুধু কারো মন খারাপ করিয়ে দিতে ইচ্ছা
করছিলোনা। তার থেকে আমি গেলাম ময়না মামার
দোকানে। মামার দোকান টিএসসি থেকে ৫০০ মিটার
সামনে ভাস্কর্যের কোল দিয়ে। ঢাকা শহরের
সেরা ঝালমুড়ি বানায় নোয়াখালী বিভাগের গর্বিত
বাঙ্গাল ময়না মামা। মামা আমাকে চটপটি দিয়ে বলে,
ওস্তাদ আজকে একটা পোলার চোখ কানা কইরা
দিছে উত্তরার দিকে। কালকে থিকা মিছিল যামু।
ময়না মামা আমার থেকে সমর্থন চায়। আমি কিছু না
বললে সে দমে যায়। অভুক্ত বেকার যুবকেরা
প্রেমে মাতাল থাকার সময় বিদ্রোহের ডাক দিতে
পারেনা। তাদের পেটে থাকে ক্ষুধা, অথচ হৃদয় ভরা
অভিমান। ক্ষুধা আর অভিমান মিলেমিশে জাতীয় সকল
আপদ বিপদ, সংগ্রাম প্রতিবাদকে রঙ্গিন খামে বন্দী
করে আকাশে পাচার করে দেয়। সেই আকাশে
চিল উড়ে, শকুন দাবড়ে বেড়ায়। খামগুলোতে শুধু
মরচে ধরেনা। এরা অপেক্ষা করে, হঠাৎ একদিন
প্রেরকের কাছে ফেরত আসবে এই অপেক্ষায়
তারা মেঘে মেঘে ভেসে বেড়ায়। আমি এখন
ভেসে বেড়াচ্ছি। নাহ, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিতে
যাবো এই আনন্দে না। আমার সাথে নীতুর দেখা
হবে। হঠাৎ করে ওর পাশে রাস্তায় হাটা শুরু করবো।
ও আমাকে দেখে কি করবে এই চিন্তার বাহিরে
আমার আর কিছু মাথায় আসছেনা। ৬ দিন আগে যে ৭টা
বাচ্চাকে লাইসেন্সহীন ড্রাইভার চাপা দিয়ে ১
সেকেন্ডে মেরে ফেললো, সেই চিন্তাও
আমার মাথায় আসছেনা। আমি খবর দেখি, পত্রিকা পড়ি
তারপর আস্তে করে নিজেকে আড়াল করে
ফেলি। মাঝে মাঝে ভীতু হয়ে বেঁচে থাকা
জায়েজ হয়ে যায়। একসময় আমি ভীতু ছিলাম না। কিন্তু
আজকাল খুব নিজেকে ভালোবাসি। এই দেশে
নিজেকে ভালোবাসলে সাহসী হয়ে বাঁচা যায়না।
রাতের বেলা নীতুকে ফোন দিলাম। নীতুর
দেশে তখন সকাল বেলা। ওর গলা ঠান্ডায় মনে হয়
জমাট বেধে গেছে। নাক টেনে টেনে কথা
বলছে। আমি একটু সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসা করলাম,
নীতু তুমি কি কান্না করছো?
নীতু চুপ করে থাকলো অনেকক্ষণ। আমিও নিশ্চুপ
থাকলাম। স্থবিরতায় উত্তর খুজছিলাম, কিন্তু সব কেমন
যেন শূণ্য হয়ে রইলো। ও আস্তে আস্তে
বললো, জানো মাঝে মাঝে খুব একা লাগে। তখন
কাউকে কাছে পাইনা। এমনটা হওয়া শুরু করছে এই
শীতের দেশে আসার পর থেকে। কেমন
যেন একটা স্তব্ধতা কাজ করে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে মনে পড়ে খুব?
নীতু অনেকক্ষণ পর ভেবে উত্তর দিলো,
জানিনাহ! তুমি তো জানো আম্মু মারা যাওয়ার পর
থেকে বাবা কেমন যেন দূরের মানুষের মত হয়ে
গেছে। খুব খারাপ একটা সময়ে তোমার সাথে
পরিচয় হয়। তুমি কি সুন্দর করে আমাকে জীবন কি তা
বোঝাতে। আমার খুব ভালো লাগতো তোমার
জীবনদর্শন। আমি তোমার সাথে আমার চিন্তা
মিলাতে পারতাম না। কারণ আমি তোমার মত না হাসিব। কিন্তু
আমার খুব ভালোবাসতে ইচ্ছা করতো। আমি
তোমাকে অনেক ভালোবাসছি জানো তো?
আমি কিছু বললাম না। ওর সব কথা এতো ভালো লাগে
কেন আমি জানিনা। আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। আমার চিৎকার
করে বলতে ইচ্ছা করছে, নীতু আর একা থাকতে
হবেনা। আমি চলে আসবো। আমি তোমার হাত
ধরে পুরাটা পৃথিবী হেটে বেড়াবো। আল্লাহর
কাছে প্রতিদিন ভিক্ষা চাইবো যেন আমার সবকয়টা
ঘুমভাঙ্গা ভোরে তোমার জন্য নতুন করে
ভালোবাসা হয়।
কিন্তু আজকে নীতু কাঁদছে। আমি জানি নীতু
কাঁদছে। ওকে বললাম, কি হয়েছে বলো তো?
নীতু ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে, হাসিব তুমি জানো তো
আমি তোমাকে ভালোবাসছি অনেক। তুমি জানো
তো তাই না? কিন্তু আমার মধ্যে একটা একাকীত্ব
ছিলো, তুমি কি সেটা কখনো বুঝতে
পেরেছো?
আমি ওকে আমার এডিমিশনের কথা বলতে গিয়েও
ধৈর্য্য ধরে থেমে যাই। ওকে আদর করে বলি, কি
হইছে তোমার বলো তো? আমাকে বলো?
নীতু নিজেকে সামলে বলে, আমার কিছুই হয়নাই।
আমি জানিনা তুমি বুঝবে কতটা। কিন্তু আমার নিজেকে
কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে আমি আর সেই
মানুষটা নেই যেই মানুষটাকে তুমি চিনতে।
(চলবে...)
"Great teacher onizuka" anime review by Afnanul shoron
পরিচয়।তাহিরা তাসরিন মিথিলা। বাংলা কবিতা। bangla kobita
জলছায়া-পর্ব-৫ ফায়াজ হাসান মাহি
মায়ের গল্প। তাহিরা তাসরিন মিথিলা। বাংলা গল্প
0 Comments