জলছায়া
ফায়াজ হাসান মাহি
জলছায়া-পর্ব -৫ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo
(৫)
সকালবেলা আমার মোবাইলে ইউনিভার্সিটি অফ উতাহর
এক প্রফেসর থেকে মেইল আসলো। তিনি
আমাকে অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানালো যে
আমার এপ্লিকেশনটি তারা গ্রহণ করেছে। তিনি চান আমি
যেন তাদেরকে ফিরতি মেইলে আমার সিদ্ধান্ত
জানাই। আমাকে এম্বেডেড সিস্টেম ডিজাইন নিয়ে
কাজ করতে হবে। তার কিছু পেপার আমাকে উনি
পড়তে দেবেন যদি আমি শেষমেষ তার সাথে কাজ
করতে আগ্রহী হই। আমি কিছুক্ষণ ভ্যান্দা মেরে
মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকলাম। একবার ভাবলাম
সবাইকে জানাই। তারপর কেমন যেন মিইয়ে গেলাম।
সব কেমন বিষণ্ণ লাগছিলো। সবকিছু। আমি হাত মুখ
ধুয়ে নাস্তা খেতে বসলাম। আজকে আমার এক
জায়গায় ইন্টারভিউ ছিলো। গত ১ বছর ২ মাস ধরে আমি
কুকুরের মত একটা চাকরী খুঁজছি। মফস্বলে অত্যন্ত
টেনেটুনে চলা এক পরিবারের ছেলের
এতোদিন বেকার হয়ে ঘোরা মানায়না। তাইতো
সেদিন অন্তুর আম্মা আমাকে বলছিলো, হাসিব তুমি কি
আসলেও পাশ করছো বলো তো? এতোদিন
চাকরী পাইলানা। রেজাল্ট খারাপ?
আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেছিলাম। হাসিমুখে তার
দেয়া এক কাপ চা আর বিস্কিট দুপুরের লাঞ্চ হিসেবে
গ্রহণ করে বিদায় নিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো শালার
এই টিউশনী আর করবোনা। এইরকম অকল্পনীয়
চিন্তা বেশিক্ষণ মাথায় টিকেনা। মেসমালিকের
বউয়ের চেহারা মনে পড়লেই ভাবনা দূর হয়ে যায়।
আন্টির নাম সুফিয়া বেগম। বিশিষ্ট কবির নামে নাম। নাম
সুফিয়া হলেও তার আচরণে কোথাও সুফি ভাব নেই।
ভাড়া একটু দেরী হলে তিনি মেসের
লোকজনের মান ইজ্জত সব খেয়ে হজম করে
ফেলে দেয়। আমি অবশ্য তার ভয়ে কখনো ভাড়া
দেরী করে দেইনি। একবার আফজাল ভাই তিনদিন
দেরী করেছিলেন। উনার সাথে নিচে যাচ্ছিলাম চা
খেতে। তখন দেখা হয়ে গেলো সুফিয়া আন্টির
সাথে।আফজাল ভাই সিনিয়র মানুষ, বয়স ৩৫ এর কাছাকাছি।
উনাকে সুফিয়া আন্টি দেখে সরাসরি বললেন,
অফিসে বেতন দেয়না? ভাড়া দেন না ক্যান?
আফজাল ভাই থতমত খেয়ে আমার দিকে একবার
তাকান। আরেকবার আন্টির দিকে। বিস্ময় কাটতে আমতা
আমতা করে বললেন, আপনি এভাবে বলছেন
কেন? আমি সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়াতে টাকা তুলতে
পারিনি। আমি কালকে রবিবার দিয়ে দেবো।
সুফিয়া আন্টি আরো ভয়ংকর স্বরে বললেন, আমি
কিভাবে কথা বলি মানে? পছন্দ না হইলে উঠায় দিবো।
দিন রাত ছাদে যেয়ে সিগ্রেট টানতে তো ভুল
হয়না। প্যান্ট টাইট দিয়ে অফিসে যাইতো তো ভুল
হয়না। ভাড়া দিতেই খালি ভুল হয়, হাঁ?
আফজাল ভাই সেদিনই বাসা ছেড়ে দিলেন। ছেড়ে
দেয়ার আগে একটা প্রেমপত্র লিখে আন্টির বাসার
দরজার নিচে রেখে যান। সেখানে শুধু একটা
ছোট্ট বাক্য লেখা ছিলো, আপনে একটা মহান
মা*ী।
অনেক চিন্তা করে রাতের বেলা আম্মাকে ফোন
দিয়ে খবরটা জানালাম। আমার গরীব মা চুপ করে
কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর বললো টাকা নিয়ে টেনশন
করিসনা। হয়ে যাবে। খুব দ্রুত লাগবে?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, চারমাস পর হলেও
চালায় নেয়া যাবে। শুধু প্লেন ফেয়ার আর কিছু
হাতখরচ হলেই চলবে।
এরপর আব্বাজান কথা বললেন, পাশের বাড়ির ফেলু
কাকাও আমাকে আমেরিকা জায়গাটা যে ভালো না বুঝায়
দিয়ে গেলেন। কিছু লোক অন্য কারো ভালো
খবর শুনলে অনেক চাইলেও নিজের মন খারাপ ভাবটা
লুকাতে পারেনা। এইরকম আরেকজন ছিলো আমার
ভার্সিটির একবছর জুনিয়র ছোটভাই আসিফ। আসিফের
সাথে রাস্তায় হঠাৎ দেখা। আমাকে সালাম দিয়ে
জিজ্ঞাসা করলো, কি অবস্থা ভাই, বেকার জীবন
কেমন যাচ্ছে?
জলছায়া-পর্ব -১ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo
(চলবে....)
জলছায়া-পর্ব -২ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo
জলছায়া-পর্ব -৩ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo
জলছায়া-পর্ব -৪ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo
গল্প। Bangla golpo।kobita
simiflex.com
জলছায়া-পর্ব -৪ ফায়াজ হাসান মাহি।বাংলা গল্প।Bangla golpo
0 Comments