নিষিদ্ধ বাংলা গল্প। bangla golpo bangla thriller golpo

 তাহিরা তাসরিন মিথিলা 


কিছু কিছু মানুষের জীবনে প্রবেশ করা আনার বারন।আমি তাদের জন্য নিষিদ্ধ। আমার বিষাক্ততা তাদেরকে বিষিয়ে দিয়েছে।এমনকি আমার ভালোবাসার মানুষ, তনয়া,তার কাছেও আমি যেতে পারি না।আমি তাকে ছুঁতে পারি না,তার ঘ্রাণ নিতে পারি না।কেননা সে এখন অন্য একজনের।আমায় ছেড়ে চলে গেছে বহুদূর,অচেনা একজনের কাছে।আমাদের ৪ বছরের প্রেম,২ বছরের সংসার সব তুচ্ছ করে দিয়ে চলে গেছে।


আমরা ভালোই ছিলাম।সুখে ছিলাম।বৈবাহিক জীবনের যাবতীয় আনন্দ আমরা একসাথে ভোগ করছিলাম।আমাদের মাঝে ভালো বুঝাপড়াও ছিল।আমি ওর ভালো লাগা-মন্দ লাগার যেমন খেয়াল রাখতাম,তেমনি তনয়া ও আমার সব কিছুর খেয়াল রাখত।আমার জন্য ও   ওর পরিবার,বাবা মা সব ছেড়ে চলে এসেছে।তাই আমি ওর একটু আলাদা যত্নি নিতাম।ওকে কখনও কষ্ট দিতাম না।আমার তনয়ার কষ্ট একদম সহ্য হয় না।


আমাদের সব কিছুই ভালো চলছিল।কিন্তু হঠাৎ একূিন তনয়া বলল ও নাকি মা হতে চলেছে।প্রথমে আমি রসিকতা ভেবে উড়িয়ে দিলাম।কিন্ত না,ঘটনাটা আসলেই সত্যি।আমি তনয়াকে বললাম এবোর্সান করিয়ে ফেলতে।কিন্তু ও বলল না ওর নাকি বাচ্চাটা চাই।আমি অনেকবার বলা সত্ত্বেও ও রাজি হল না।আমি আসলে বাচ্চা চায়নি তখন।শুধু তখন কেন,কখনই আমি বাচ্চা চায়নি।আমার বাচ্চা অনেক ঝামেলা লাগে।শুধু একটা বাচ্চা হবে,ওইটাকে খাওয়াও,পড়াও,বড় কর-ওফ! কত্ত ঝামেলা।শুধু একটা ঝামেলাকে আনার কোনো মানে আছে?এভাবেই তো আমাদের দেশের জনসংখ্যা বাড়ে,আর মামুষ দোষ দেয় দারিদ্র্যতাকে।মানে,নিজের দোষে তোমরা মরবে আর দোস দিবে যমকে?


আমি তনয়ার দিকে তাকাতে পারছিলাম না।ওর যে কি কষ্ট হচ্ছিল!? কিচ্ছু খেতে পারতো না।কয়েক মাস পর তো ওকে অফিস থেকেও ছুটি দিয়ে দিল।পেটটা ফুলে এত্ত বড় একটা ঢোল হয়ে গেছে।ঠিক মতো উঠতে বসতেও পারতো না।আমার তো মাঝে মাঝে মনে হত পেটের মাঝে একটা ঘুসি মেরে খেল ওইখানেই খতম করে দিই।কিন্তু তনয়া কষ্ট পাবে।তাই কিছুই বলতাম না,হাসি মুখে থাকতাম।এই বাচ্চাটাকে নিয়ে আমাদের কতদিন যে ঝগড়া হয়েছে।আমি তারপর ভাবলাম,তনয়া যদি খুশি থাকে তাহলে আমি একটু কষ্ট করি।


যেদিন তনয়ার ডেলিভারি হলো,কি যে কষ্ট হচ্ছিল। ওর।চিৎকার করে হসপিটাল মাথায় তুলছিল।আমারও চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল ওর জন্য।আমি বুঝি না,একটা অবাঞ্চিত ঝামেলার জন্য কেন মেয়েরা এতো কষ্ট করে? কষ্ট করে জন্ম ও দিবে,আবার সেটার জন্য সারাজীবন কষ্ট করবে।


যাই হোক,বাচ্চাটা হওয়ার পর আমার আর তনয়ার মাঝে দুরত্ব অনেক বেড়ে যায়।আমাদের মাঝখানে ওই পিচ্চি ঝামেলাটা ঘুমায়।আর তনয়াও আগের মতো আমার সাথে কথা বলে না।তার সব কিছু এখন ওই বাচ্চা বদমাশটাকে ঘিরে।সারাক্ষণ ওটাকে নিয়েই থাকে।একটু পর পর খাওয়ানে,ডায়পার বদলানো।এতো খাবার কই যায়?এতোটুকু একটা পেট? আমার এসব সহ্য হচ্ছিল  না।আমি শুধু তনায়র মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতাম না।হাসি হাসি মুখ করে থাকতাম।


কিন্তু মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে।সব কিছু সীমার বাইরে চলে যাচ্ছিল।আমার ভেতর জমে থাকা লাভা ফুটতে শুরু করছিল।আমি হঠাৎ হঠাৎ  সামনেই রাগ দেখিয়ে ফেলতাম।এ নিয়ে তনয়ার সাথেও আমার ঝগড়া লেগে যেত।একদিন তনয়া আমাকে অনেক জোরে ধমকই দিয়ে দিল।দুধের বোতল পরিষ্কার ছিল না বলে।আমি ওইদিন ই ঠিক করেছিলাম, এ বাচ্চাটাকে আমাদের মাঝে আর আসতে দেওয়া চলে না।ও আমাদের পথের কাটা হয়ে আছে।তাই ওকে সরাতে হবে।শুধু সরালে হবে না।একদম উপরে ফেলতে হবে।


সেদিন তনয়া সব কাজ সেরে সবে মাত্র গোসলে গিয়েছে।ভাবলাম এই এক সুযোগ।আমি রুমে গিয়ে দেখি পিচ্চি টা ঘুমাচ্ছে। কোলে নিলাম আর সাথে সাথে কান্না শুরু।কি কান্নারে বাবা!কান একদম ঝালাপালা করে দেয়।একবার শুরু হলে আর থামার নাম ই নেয় না!আমি মাথায় রক্ত উঠে গেল।আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না।যে করেই  হোক ওর কানা থামাতেই হবে।কিছু করতে না পেরে সজোড়ে একটা আছাড় দিলাম!ব্যস,আর কান্না নেই।একদম চুপ।মাথাটা ফ্লোরে পড়ে একদম থেতলে গিয়েছে।রক্তে ভেসে গেছে সারা ঘর।কিন্তু আমার মন তখন ভেসে যাচ্ছিল চরম আনন্দে।আমি খুশিতে চিৎকার করে উঠলাম।তনয়াও ততক্ষণে চলে এসেছে।আমি ওকে দেখলাম আর বললাম,"আর কষ্ট হবে না তোমার।"কিন্তু তনয়া তখন  বেহুশ হয়ে গেল।


অনেক চেষ্টা করেও আমি ওর ঙৃগান ফিরাতে পারলাম না।হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার লাগলো।তারওর আর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেনি।তনয়া তখন থেকেই ওর মা-বাবার কাছে থাকতো।আমি বুঝতেই পারছিলাম না আমার দোষটা কি?একটা উটকো ঝামেলাকে বিদায় করেছি তাই?

আমি অনেকবার তনয়ার কাছে গিয়েছি, ওকে ফিরিয়ে আনার জন্য।কিন্তু ও আসেনি।শুধু আমাকে বলেছে,"তুমি একটা জানেয়ার।তুমি একটা নিষিদ্ধ জীব।মানুষের কাতারে তো পরই না,মামুষের সমাজেও তুমি নিষিদ্ধ। "


আমি তনয়াকে ডিভোর্স দিতে চায়নি। কিন্তু ও যখন এসব কথা বলল,আমিই রাগে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি।আমার কোনো দোষ নেই,তবুও কেন আমাকে এইভাবে বলবে ও?


তনয়া,আমি জানি নস আমার ভুল কি?কিন্তু বমার তোমাকে চাই।শুধু তোমাকে।আমি নিষিদ্ধ না,আমি নিষিদ্ধ না।..........