Mayer golpo.মায়ের গল্প






মায়ের গল্প-।তাহিরা তাসরিন মিথিলা।বাংলা গল্প।মুক্তিযুদ্ধের গল্প।bangla golpo। mukti juddho er golpo

"শারমিন আপু,শারমিন আপু"

"কি?" শারমিন ডাকে সারা দিয়ে বলল।

"আমাকে একটু সাহায্য করবি?" আবরার বলল।


শারমিন আর আবরার দুই ভাই-বোন।শারমিন এবার ক্লাস নাইনে উঠেছে আর আবরার তার এক ক্লাস নিচে পড়ে।

"কেন? কি হয়েছে?"

"এই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ফিতিহাস আর ভাল্লাগে না।কিছু সর্টকাট বলে দে না?"

"ইতিহাসের আবার সর্টকাট কি?মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তো এক্কেবারে অল্প,এইটুকুও পড়তে পারবি না?" আবরারের পাশে এসে বসল শারমিন।"এইটুকুই পড়তে না পারলে তুই কেমন বাঙালি?"

"মানে?" আবরার বলল।কিছুক্ষণ চুপ থেকে  আবার বলল,"একটা গল্প শুনা না, আপু!"

"পড়ার মাঝখানে গল্প এল কোত্থেকে??" মা বললেন।

শারমিন আর আবরার এর মা শাহনাজ বেগম,হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।

"মা,একটা গল্প!প্লিজ!অনেকক্ষণ ধরেই তো পড়তেছি।একটা গল্প?" আবরার আবদার করে বসল।

"হ্যা,মা,অনেকদিন হল তোমার কোনো গল্প শুনি না," সাথে শারমিনও সায় দিল।

"তোরা কি এখনও ছোটো বাচ্চা আছিস?বাচ্চাদের মত বলছিস গল্প শুনবি?" বলেই শাহনাজ বেগম হাসতে লাগলেন।

আবরার মুখ গম্ভীর করে বলল,"মা,তুমি তো জানো,১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু।তাই আমরা এই ছোট্ট দুটি শিশু তোমার কাছে আবদার করছি।প্লিজ একটা গল্প শুনাও।"

"আচ্ছা, আচ্ছা, " শাহনাজ বেগম হেসে বলল।"বলছি"

"মা,নানাভাইয়ের গল্প বলবে।" আবরার বলল।

আবরারের দিকে তাকিয়ে,মা একটু মুচকি হেসে গল্প বলা শুরু করল।


"তখন আমি একটু বড় হয়েছি।" পুরো বাড়ি নিঃস্তব্ধ।বিকেলের রাস্তায় রিকশার টুংটাং আওয়াজ আর বাইরে পাখির আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনা যাচ্ছে না।

শাহনাজ বেগম গল্প চালিয়ে গেলেন।


"আমার বয়স তখন ১২-১৩ হবে।আর তোদের ছোটোমণির বয়স মাত্র ৫বছর।বাবা সারাদিন বাইরে কাজ করে ঘরে ফিরত,আর মা আমাদের দুবোন আর সংসার সামলাতো।সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল।কিন্তু হঠাৎ একদিন....সন্ধ্যায় বাবা দৌড়ে বাড়ি এল।আর এসেই রেডিও অন করল।

১৯৭১ এর ৮ই মার্চের বিকাল।বঙ্গবন্ধুর সেই জ্বালাময়ী বক্তৃতা।


     " তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো"

     আমরা সবাই রেডিওর কাছেই ছিলাম।মা গ্রামের সহজ সরল মেয়ে।এসব জটিল রাজনীতি বুঝতে পারেননি।বাবার তাকিয়ে মা জিজ্ঞেস করলেন,"কি ব্যাপার গো?কি হয়েছে?এত তোড়জোড় কিসের?"


তখন বাবা বললেন,"তুৃমি জানো না?দেশটা স্বাধীন হইব,শেখসাব যুদ্ধ ডাকছে।দেশটা আর পাকিস্তান থাকবো না,এখন বাংলাদেশ হইবো।"

বাবার চোখে আমি সেদিন এক মিশ্র দৃষ্টি দেখেছিলাম।রাগ-ক্ষোভ-আনন্দ-গৌরব- তেজ- সব যেন মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।একেই মনে হয় স্বাধীনতার চেতনা বলে।

 কিছুদিন পর,রাতের বেলা। কত আর রাত হবে,১০টা বা ১১টা।বাইরে থেকে কারা যেন বাবাকে ডাকছিল।আমরা সবাই বেড়িয়ে এলাম।দেখি গ্রামের যত জোয়ান ছেলেরা আছে সবাই এক হয়েছে।"

দম ফেলার জন্য একটু থামলেন শাহনাজ বেগম।আবরার বলল,"তারপর?"

"সবার কাঁধে ঝোলা আর হাতে লাঠি।" শাহনাজ বেগম আবার শুরু করলেন।"আমি অবাক হয়ে দেখলাম।

তাদের মধ্যে জসীম চাচা বললেন,তুমি যাইবা না আব্বাস? 

মা হঠাৎ সব বুঝতে পারল।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,কই যাইবা তুমি?এই সময়ে আমারে মাইয়া দুইটারে ফালাইয়া রাইখা কই যাইবা?

আমি যুদ্ধে যামু, বাবা বলল।সেদিন বাবার কন্ঠটা আমার কাছে অন্যরকম লাগছিল।

আমি যুদ্ধে যামু,দেশটারে স্বাধীন করুম।

বাবার কথায় মা হতবাক হয়ে গেল।মুখ দিয়ে আর কোনো বের হল না।হঠাৎ করে মাকে দেখে মনে হল কোনো ঝড় বয়ে গিয়েছে তার উপর দিয়ে।এক মুহুর্তের ঝড়।

বাবা তখন মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,আমি জানি তুমি পারবা আমার মাইয়া দুইটারে বাচাইয়া রাখতে...পারবা না?

মা কেঁদে উঠলেন।আমি প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারলাম।বাবা চলে যাবেন। আর কখনও দেখা হবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।আর তোদের ছোটোমণি,সে বেচারি বুঝতেই পারেনি কি ঘটছে।সে বাবাকে বলল,আব্বা আমার জন্য পুতুল আনবা।

বাবাকে আমি এর আগে কখনও কাঁদতে দেখিনি।বাবা তোদের ছোটোমনির কথা শুনে হাওমাও করে কেঁদে উঠল।তারপরেই নিজেকে সামলে আমাদের সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন বাবা।দেশ স্বাধীন করতে।

শাহনাজ বেগম চোখ মুছে আবার বলতে লাগলেন,"বাবা ছাড়া আমরা কাটিয়ে দিলাম ৩ টি মাস।একদিন আমাদের গ্রামেও পাকিস্তানিরা আক্রমণ করে বসল।গ্রামের সবার সাথে আমরা ও পালাতে লাগলাম।মা তোদের ছোটোমনিকে কোলে তুলে, আমার হাত ধরে ছুটতে লাগলেন।ছুটতে ছুটতে আমরা নদীরধারে পৌঁছে গেলাম।

নদীর তীরে একটি নৌকাই ছিল।সবে মাত্র নোঙর তুলছে, আমরা এমন সময় পরিমরি করে নৌকায় উঠে বসলাম।মা মাঝিকে বলল,ভাই,তাড়াতাড়ি চল।


মাঝিও কোনো কথা না বলে নৌকা চালাতে লাগলো।আমাদের নৌকাটায় আমরা ছাড়াও আরও প্রায় ১২-১৩ জন ছিলাম।গ্রামেরই মানুষ আমরা,একে অপরকে চিনি অনেকবছর ধরে।কিন্তু ঐদিন কেন জানি অপরিচিত মনে হচ্ছে।উত্তেজনায় খেয়ালই করি এই নৌকায় একটা লাশ ছিল।কেন জানি গ্রামের মানুষগুলোর চেয়ে লাশটাকে আমার খুব আপন মনে হচ্ছিল।মনে হচ্ছিল সাদা কাপড়ে মোরা লাশটাই এখন আমার সবচেয়ে কাছের কেউ।


নৌকাটাতে অস্বাভাবিক নীরবতা।বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দ আর দূর থেকে ভেসে আসা গুলাগুলি ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।সেদিন যেন প্রকৃতিও ভয় পেয়ে নিশ্চুপ ছিল।


আমরা তখন মাঝনদীতে।হঠাৎ  এই নিঃস্তব্ধতার মাঝেও কোত্থেকে যেন দমকা হাওয়া বইল।আর তখনই লসশের মুখ থেকে কাপড়টুকু সরে গেল।সাথে সাথে বাবার মুখটা ভেসে উঠল।তোদের ছোটোমনি দেখে বলল,আব্বা, তুমি ঘুমাইয়া আছো কেন?উঠো।উঠো....

মা তো...প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেল......."


শাহনাজ বেগম আর কান্না আটকিয়ে রাখতে পারলেন না।ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন।সাথে আবরার আর শারমিনও








TAGS:
মুজিব বর্ষ কবিতা রোদ নিয়ে কবিতা এত হাসি কোথায় পেলে কবিতা অন্ধকার নিয়ে কবিতা রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কবিতা আমি একটা তুই চাই কবিতা করোনা নিয়ে কবিতা
বসন্ত নয় অবহেলা কবিতা
কেউ কথা রাখে নি কবিতা লিরিক্স
অবনী বাড়ি আছো কবিতা
মারজুক রাসেল কবিতা
শিউলি ফুলের কবিতা
আয় আয় চাঁদ মামা কবিতা
বিদায় অনুষ্ঠানের কবিতা
শেষের কবিতা pdf download
বসন্তের কবিতা সমগ্র
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতা
মহাদেব সাহার কবিতা
মনে থাকবে কবিতা
শঙ্খচিল কবিতা
বাংলা কবিতা ক্যাপশন
স্বপ্ন নিয়ে কবিতা
জীবন নিয়ে উক্তি
নন্দলাল কবিতা
শুভ রাত্রি কবিতা
bangla kobita,
bangla golpo ,
kobita ,
golpo ,
notun golpo,
fb status
fb caption
fb captions bangla,
bangla fb status ,
FB status about life bangla
best caption bangla,bangla kobitar line , bangla kobita caption , bangla kobita caption bangla,
সাম্প্রতিক বাংলা কবিতার লাইন ,
বাংলা কবিতা
Romantic bangla kobita,বাংলা কবিতা,
বাংলা কবিতা স্ট্যাটাস ,
ভালো বাংলা কবিতা ,
বাংলা রোমান্টিক কবিতার লাইন ,
প্রেমের কবিতা ,
আধুনিক প্রেমের কবিতা,
bangla golpo romantic ,
বাংলা প্রেমের কবিতা ,
ফুল নিয়ে প্রেমের কবিতা ,
প্রথম দেখা প্রেমের কবিতা ,
facebook status bangla ,
bangla sad status for fb,facebook status bangla 2021
bengali sad status for Whatsapp ,facebook status bangla 2020
simiflex.com
Bangla blog, blogging tahira tasrin mithila
tahira tasrin mithila
Simiflex simiflex